২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হয়। এক দীর্ঘস্থায়ী স্বৈরশাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে জনগণ মুক্তির স্বাদ পায়। এ যেন এক নবজন্ম—অনেকে যাকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে অভিহিত করেছেন। জনগণের এই গণআন্দোলন সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের পক্ষে একটি অবিস্মরণীয় মাইলফলক। তবে, নতুন এই অধ্যায়ে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্টের অপপ্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
এই বিপ্লব আরব বসন্তের সাথে তুলনা করা যায়। যেমনভাবে মোহাম্মদ বুয়াজিজির আত্মাহুতিতে আরব দেশগুলোতে গণজাগরণের সূচনা হয়েছিল, তেমনি ৫ আগস্টের বিপ্লব ছিল জনগণের সমষ্টিগত আকাঙ্খার প্রতিফলন। কিন্তু, আমাদের সন্তানেরা কোনো ভৌগোলিক কিংবা রাজনৈতিক বসন্ত চায়নি; তারা চেয়েছিল স্বাধীনতা, ন্যায় এবং মর্যাদা। অথচ রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে বিভাজন ও ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করা হচ্ছে। এর ফলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও শান্তির প্রত্যাশা পূরণে বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে দেশকে।
স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটলেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এখনও পুনর্গঠন হয়নি। কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনগণের আস্থার অবমাননা করেছে। একটি জনগণবান্ধব বাহিনীর আদর্শ থেকে সরে এসে দলীয় রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় জনগণের মনে অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তার দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে এসে জনগণের সেবক হওয়ার আহ্বান সত্যিকার অর্থে এই বাহিনীকে পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়।
দেশে যেকোনো শক্তিশালী বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের বিশ্বাসই হতে পারে তাদের প্রকৃত শক্তি। গণতন্ত্র ও নিরাপত্তার প্রতি জনগণের এই আস্থা ফিরিয়ে আনাই নতুন বাংলাদেশের জন্য সময়ের দাবি। ৫ আগস্টের বিপ্লব একটি প্রমাণ যে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক, স্বাধীন এবং মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে চায়। বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উচিত, জনগণের নিরাপত্তা ও সেবাদানের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া এবং গণমানুষের আস্থার প্রতিদান দেওয়া।
বাংলাদেশ আজ একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার এই চ্যালেঞ্জে সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা, এবং জনগণের সেবায় সৎ-নিরপেক্ষ ভূমিকার মাধ্যমে জনগণের সার্থক বন্ধুতে পরিণত হোক প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান—এই প্রত্যাশাই জাতির।