আশাশুনি প্রতিনিধি: একাদশ শ্রেণীর এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কলেজ ছাত্রীকে অপহরণের ১৯ দিন পর থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরার আশাশুনি থানায় এ মামলা রেকর্ড করা হয়। মামলায় অপহরণকারি ও অপহরণে সহযোগিতার অভিযোগে তিনজনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে।
আসামীরা হলেন, আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের এশরাফুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলাম (২২), একই গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াদুদ এর ছেলে এশরাফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী পারভিন খাতুন।
আশাশুনি উপজেলার পূর্ব কাদাকাটি গ্রামের এক কৃষক জানান, তার মেয়ে দরগাহপুর কলেজিয়েট স্কুলে মানবিক বিভাগে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে কাদাকাটি গ্রামের ফরিদুল ইসলাম তার মেয়েকে উত্যক্ত করতো। তাকে কুপ্রস্তাব দিতো।
মেয়ে মা ও তাকে জানালে বিষয়টি তিনি ফরিদুলের বাবা, মা ও স্বজনদের অবহিত করেন। এতে ফরিদুল, তার বাবা ও মা ক্ষুব্ধ হয়। একপর্যায়ে গত ৮ মার্চ সকাল ৮টার দিকে বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকার সময় একটি মাইক্রোবাসে করে ফরিদুল ও তার বন্ধুরা মেয়ের মুখে রুমাল গুজে দিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
মুখে রুমাল চেপে ধরার আগেই মেয়ের চিৎকারে তিনি ও তার ভাইসহ স্বজনরা মাইক্রোবাসটি ধাওয়া করেও ধরতে পারেননি। একপর্যায়ে মেয়েকে এশরাফুলের বাড়িসহ সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুজি করে না পেয়ে তিনি বাদি হয়ে গত ১২ মার্চ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক অনাথ মিত্রকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। থানায় অভিযোগ করায় মেয়েকে ধর্মান্তরিত করে বা ভারতে পাচার করা ছাড়াও পতিতাতলে বিক্রির হুমকি দেয় এশরাফুল। মেয়েটিকে উদ্ধার করে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য কাদাকাটি ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক তুহিনুজ্জামান উপপরিদর্শক অনাথ মিত্রের কাছ থেকে তিন দিন সময় নেন।
এরপর থেকে এশরাফুল ও তার স্ত্রী পারভিন তাকে (ভিকটিমের বাবা) বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেয়। মেয়ে উদ্ধারের ব্যাপারে পুলিশের ভূমিকা ভাল না হওয়ায় তিনি বিষয়টি সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে অবহিত করে গত ১৬ মার্চ থানায় আবারো এজাহার দায়ের করেন।
এবার তদন্তকারি কর্মকর্তা হিসেবে উপপরিদর্শক আব্দুর রশিদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে ভিকটিমকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য এশরাফুল ২৫ মার্চ সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে তদ্বির শুরু করেন। এমনকি তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভিকটিমকে উদ্ধার করে দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত করে টালবাহানা করতে থাকেন।
একপর্যায়ে ভিকটিমকে ধর্মান্তরিত করে ফারহানা নাম দিয়ে ছেলে ফরিদুলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন মর্মে এক আইন কর্মকর্তা ও এক সাংবাদিককে হুমকি দেন পারভিন খাতুন। বিষয়টি বুধবার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নোমান হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদকে অবহিত করা হয়। অবশেষে বৃহষ্পতিবার মামলা রেকর্ড করা হয়।
এ ব্যাপারে পারভিন খাতুন এ প্রতিনিধিকে বলেন, ওই হিন্দু মেয়েকে ধর্মান্তরিত করে তার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। কারো কিছু করার থাকলে করে নিক।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নোমান হোসেন জানান, মেয়েটিকে উদ্ধার করে তার বাবা ও মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। সফল না হওয়ায় মেয়েটির বাবার দায়েরকৃত এজাহারটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৭/৩০ ধারায় বৃহষ্পতিবার রেকর্ড করা হয়েছে। ভিকটিম উদ্ধার ও আসামী গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।