আজ ১০:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
[gtranslate]

সুন্দরবনে জেলেদের নিকট থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ বনবিভাগের বিরুদ্ধে

  • রিপোর্টার
  • আপডেট টাইম : ০৮:৪৭:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
  • ১১৩ বার

আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা: সুন্দরবনকে বাঁচাতে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও। বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে দিন দিন সুন্দরবনে অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রোলিং টিম এর বিরুদ্ধে সাড়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ২৯ জেলে মুক্তি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে বনজীবিদের নিকট থেকে অভিযোগ উঠছে। সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকা কাছিকাটার দোলনা পীর, তেঁতুলবাড়িয়া, বকবাড়িয়া, পাগলের খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭নৌকার ২৯জন জেলে আটক করে। আটকের পর মামলা ও জেল হাজতে দেয়ার ভয় দেখিয়ে সাত নৌকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়।

আটককৃত জেলেদের সাথে মুক্তি দেওয়ার শর্তে টাকার চুক্তি করেন স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের টিম লিডার শিবেন মজুমদার, সহকারী টিম লিডার গাজী ফয়সাল ও আনিস। এছাড়া স্মার্ট পেট্রোল টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধে টাকার মাধ্যমে চুক্তি থাকা নৌকাদের ছেড়ে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। তথ্য অনুসন্ধানে যানাযায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আটক হওয়া জেলে ফিরে আশা জেলেদের নিকট থেকে জানা যায়, সুন্দরবনের ডিঙ্গি মারি এলাকা থেকে ৩টা নৌকা আটক করে সম্প্রতি । পরে ২টি নৌকা টাকার বিনিময়ে চুক্তি থাকায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়। ১টি নৌকার চুক্তি না থাকায় নৌকাটি চালান দেয়।

৮ মার্চ সুন্দরবনের নটাবেকি খেজুর দানা এলাকা থেকে ৩টি নৌকা আটক করে। এরমধ্যে হোসেন ও অয়ন কোম্পানির দুইটা নৌকার চুক্তি থাকায় ছেড়ে দেয়। আরেকটা নৌকার চুক্তি না থাকায় নটাবেকি অফিসে জমা দেয়। সুন্দরবনের হলদিবনিয়ার তালপটিখাল এলাকা থেকে বিপুল কোম্পানির, হোসেন কোম্পানির, আবু সালে কোম্পানির চারটা নৌকা আটক করে কিন্তু অবৈধ চুক্তি থাকায় নৌকাগুলো ছেড়ে দেয়। সুন্দরবনের মান্দার বাড়িয়া এলাকায় ৫ টি নৌকা আটক করে। এর মধ্যে অয়ন কোম্পানি ও কামরুল কোম্পানির ৪টি নৌকা আটক করে। পরবর্তীতে তাদের সাথে পূর্বে অর্থনৈতিক চুক্তি থাকায় নৌকা ছেড়ে দেয়। তার মধ্যে মজনু কোম্পানির কোনো নৌকা অবৈধ চুক্তি না থাকায় সেগুলো চালান দেয়। সুন্দরবনের দোবেকী মেঘনা এলাকায় থেকে শরীফ কোম্পানির ১ টা নৌকা হোসেন কোম্পানির ৩ অয়ন কোম্পানির পারসে পোনার বোট আটকের পর তাদের সাথে চুক্তি থাকায় সবগুলো ছেড়ে দেয়।

তথ্য অনুসন্ধান আরও উঠে আসে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ কাঁকড়া ধরতে হলে স্মার্ট পেট্রলিং টিমের সাথে মাছ কোম্পানিদের চুক্তি হয়। প্রতি গণে কাঁকড়া নৌকা প্রতি ২ হাজার টাকা, মাছের নৌকা ৪ হাজার টাকা। ৭ই মার্চ বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রোলিং টিম নামার সময় নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ কাকড়া ধরতে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য মাছ কোম্পানিদের সাথে চুক্তি হয়। হোসেন কোম্পানির ৮ নৌকা অয়ন কোম্পানির ২২ টি মাছের নৌকা পারসে পোনার ২টা বোর্ড, কামরুল কোম্পানির ১৫ টা নৌকা, রহিম কোম্পানির ৩৬ টা কাঁকড়া নৌকা ৩টা মাছের নৌকা।

আটককৃত জেলে সালাম বলেন, সুন্দরবনের তেতুলবাড়িয়া এলাকা থেকে স্মার্ট পেট্রোলিং টিম আমার মাছের নৌকা আটক করে। আটকের পরপরই স্পিড বোর্ড ড্রাইভার হাবিব ও ফাইবার ড্রাইভার পারভেজ আমার কাছে চারজন লোকসহ একটি নৌকার মুক্তির জন্য এক লক্ষ টাকা দাবি করে। সর্বশেষ একটি বিকাশ নাম্বারের ৪০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পাই। জেলে আব্দুর রহিম জানান, বনদস্যুর পাশাপাশি বন বিভাগের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। গত গণে বনে মাছ ধরতে যেয়ে কাচিকাটা থেকে স্মার্ট পেট্রোলিং টিম আমাদেরকে আটক করে। ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। একদিকে বনদস্যু টাকা নিচ্ছে অন্যদিকে বন বিভাগ জুলুম করে টাকা আদায় করছে। সুন্দরবনে প্রবেশ করলে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে,টাকা দিতে না পারলে জাল নৌকা ডিঙ্গি সব নিয়ে নিচ্ছে।

স্মার্ট পেট্রলিং টিমের টিম লিডার শিবেন মজুমদারকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে তার ফোন রিসিভ হয়নি। সহকারী টিম লিটার গাজী ফয়সাল টাকা নিয়ে জেলেদের ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি টিম লিডার ছিলাম না। টিম লিডার যা বলে আমাদেরকে শুনতে হয়। এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান বলেন, অভিযোগটা শুনেছি যদি স্মার্ট পেট্রলিং টিম দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

সুন্দরবনে জেলেদের নিকট থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ বনবিভাগের বিরুদ্ধে

আপডেট টাইম : ০৮:৪৭:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫

আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা: সুন্দরবনকে বাঁচাতে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও। বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে দিন দিন সুন্দরবনে অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রোলিং টিম এর বিরুদ্ধে সাড়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ২৯ জেলে মুক্তি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে বনজীবিদের নিকট থেকে অভিযোগ উঠছে। সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকা কাছিকাটার দোলনা পীর, তেঁতুলবাড়িয়া, বকবাড়িয়া, পাগলের খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭নৌকার ২৯জন জেলে আটক করে। আটকের পর মামলা ও জেল হাজতে দেয়ার ভয় দেখিয়ে সাত নৌকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়।

আটককৃত জেলেদের সাথে মুক্তি দেওয়ার শর্তে টাকার চুক্তি করেন স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের টিম লিডার শিবেন মজুমদার, সহকারী টিম লিডার গাজী ফয়সাল ও আনিস। এছাড়া স্মার্ট পেট্রোল টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধে টাকার মাধ্যমে চুক্তি থাকা নৌকাদের ছেড়ে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। তথ্য অনুসন্ধানে যানাযায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আটক হওয়া জেলে ফিরে আশা জেলেদের নিকট থেকে জানা যায়, সুন্দরবনের ডিঙ্গি মারি এলাকা থেকে ৩টা নৌকা আটক করে সম্প্রতি । পরে ২টি নৌকা টাকার বিনিময়ে চুক্তি থাকায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়। ১টি নৌকার চুক্তি না থাকায় নৌকাটি চালান দেয়।

৮ মার্চ সুন্দরবনের নটাবেকি খেজুর দানা এলাকা থেকে ৩টি নৌকা আটক করে। এরমধ্যে হোসেন ও অয়ন কোম্পানির দুইটা নৌকার চুক্তি থাকায় ছেড়ে দেয়। আরেকটা নৌকার চুক্তি না থাকায় নটাবেকি অফিসে জমা দেয়। সুন্দরবনের হলদিবনিয়ার তালপটিখাল এলাকা থেকে বিপুল কোম্পানির, হোসেন কোম্পানির, আবু সালে কোম্পানির চারটা নৌকা আটক করে কিন্তু অবৈধ চুক্তি থাকায় নৌকাগুলো ছেড়ে দেয়। সুন্দরবনের মান্দার বাড়িয়া এলাকায় ৫ টি নৌকা আটক করে। এর মধ্যে অয়ন কোম্পানি ও কামরুল কোম্পানির ৪টি নৌকা আটক করে। পরবর্তীতে তাদের সাথে পূর্বে অর্থনৈতিক চুক্তি থাকায় নৌকা ছেড়ে দেয়। তার মধ্যে মজনু কোম্পানির কোনো নৌকা অবৈধ চুক্তি না থাকায় সেগুলো চালান দেয়। সুন্দরবনের দোবেকী মেঘনা এলাকায় থেকে শরীফ কোম্পানির ১ টা নৌকা হোসেন কোম্পানির ৩ অয়ন কোম্পানির পারসে পোনার বোট আটকের পর তাদের সাথে চুক্তি থাকায় সবগুলো ছেড়ে দেয়।

তথ্য অনুসন্ধান আরও উঠে আসে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ কাঁকড়া ধরতে হলে স্মার্ট পেট্রলিং টিমের সাথে মাছ কোম্পানিদের চুক্তি হয়। প্রতি গণে কাঁকড়া নৌকা প্রতি ২ হাজার টাকা, মাছের নৌকা ৪ হাজার টাকা। ৭ই মার্চ বন বিভাগের স্মার্ট পেট্রোলিং টিম নামার সময় নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ কাকড়া ধরতে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য মাছ কোম্পানিদের সাথে চুক্তি হয়। হোসেন কোম্পানির ৮ নৌকা অয়ন কোম্পানির ২২ টি মাছের নৌকা পারসে পোনার ২টা বোর্ড, কামরুল কোম্পানির ১৫ টা নৌকা, রহিম কোম্পানির ৩৬ টা কাঁকড়া নৌকা ৩টা মাছের নৌকা।

আটককৃত জেলে সালাম বলেন, সুন্দরবনের তেতুলবাড়িয়া এলাকা থেকে স্মার্ট পেট্রোলিং টিম আমার মাছের নৌকা আটক করে। আটকের পরপরই স্পিড বোর্ড ড্রাইভার হাবিব ও ফাইবার ড্রাইভার পারভেজ আমার কাছে চারজন লোকসহ একটি নৌকার মুক্তির জন্য এক লক্ষ টাকা দাবি করে। সর্বশেষ একটি বিকাশ নাম্বারের ৪০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পাই। জেলে আব্দুর রহিম জানান, বনদস্যুর পাশাপাশি বন বিভাগের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। গত গণে বনে মাছ ধরতে যেয়ে কাচিকাটা থেকে স্মার্ট পেট্রোলিং টিম আমাদেরকে আটক করে। ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। একদিকে বনদস্যু টাকা নিচ্ছে অন্যদিকে বন বিভাগ জুলুম করে টাকা আদায় করছে। সুন্দরবনে প্রবেশ করলে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে,টাকা দিতে না পারলে জাল নৌকা ডিঙ্গি সব নিয়ে নিচ্ছে।

স্মার্ট পেট্রলিং টিমের টিম লিডার শিবেন মজুমদারকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে তার ফোন রিসিভ হয়নি। সহকারী টিম লিটার গাজী ফয়সাল টাকা নিয়ে জেলেদের ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি টিম লিডার ছিলাম না। টিম লিডার যা বলে আমাদেরকে শুনতে হয়। এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান বলেন, অভিযোগটা শুনেছি যদি স্মার্ট পেট্রলিং টিম দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।