আজ ১১:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
[gtranslate]
শিরোনাম ::
ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় রোধে সাতক্ষীরায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন শ্যামনগরে আড়ৎ থেকে ৭৫ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ব্যবসায়ীকে জরিমানা সাতক্ষীরায় এল্লারচর সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড ধ্বসে পড়ায় দুর্ভোগে তিন উপজেলার জনপদ আপিল বিভাগের রায়ের পর ইশরাকের শপথের বিষয়ে যা বললেন সিইসি নির্বাচন প্রস‌ঙ্গে প্রধান উপ‌দেষ্টার উ‌দ্দে‌শ্যে আপনি যদি ডেট দিতে না পারেন, আমরাই দিয়ে দেবো : দুদু গভীর নিম্নচাপ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন, ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে কাল সীমান্তে ৪টি স্বর্ণের বারসহ চোরাকারবারি আটক গুম হওয়া সাতক্ষীরা বিএনপি নেতা আবু সেলিমকে ফিরিয়ে দিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ বাংলাদেশে দেখা গেছে জিলহজের চাঁদ পবিত্র ঈদুল আজহা ৭ জুন সাতক্ষীরায় অবহিতকরণ সভায় বক্তার ‘স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও গৃহে তৈরী খাদ্য গ্রহণে অভ্যাস করতে হবে’

শ্রমিক লীগ নেতা পলাশের নিয়ন্ত্রণে ওএমএস, টিসিবি ১৫ লাইসেন্স

  • রিপোর্টার
  • আপডেট টাইম : ০২:৩৪:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
  • ৮১ বার

আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশের বিরুদ্ধে বিডিএস সার বীজ, টিসিবি, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইজসহ ১৫টি লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত পলাশ তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের প্রভাবশালী আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তৎকালীন এমপি ইঞ্জিনিয়ার মুজিবর রহমান ও মুস্তফা লুৎফৎল্লার ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী হয়ে উঠেন আব্দুর রব পলাশ। পরে নিজের পরিবার আত্মীয়-স্বজনের নামে টিসিবি, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইজ ও বিএডিসি সার বীজের ১৫টি লাইসেন্স করে নেয়। এক পর্যায়ে সিন্ডিকেট করে প্রায় ২০-৩০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক বনে যান তিনি।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে পলাশ নিজের নামে দুইটি টিসিবি লাইসেন্স করেছেন। একটি পাটকেলঘাটা বাজারে মুন ট্রের্ডাস অপরটি আশাশুনি কুল্লা গুনগরকাটিতে মের্সাস রাদ এন্টারপ্রাইজ। তাছাড়া তার আপন ছোট ভাই চাকরিচ্যুত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুর রউফ পল্টুর শালা জাহিদ হাসানের নামে মের্সাস জাহিদ স্টোর, খেশরা ইউনিয়নে বড়কাশিপুর মেঝো শ্যালিকা শালী শিরিনার নামে মের্সাস আলিফ ট্রের্ডাস, খালাতো ভাই হাবিবুর রহমানের নামে মের্সাস হাবিব ষ্টোর, মামা রবিউলের নামে মের্সাস মাওয়া ষ্টোর, খালু মোক্তার আলীর নামে মের্সাস আবিদ মুদিখানা ষ্টোর ও ছোট ভাই আব্দুর রউফের নামে মের্সাস মাছুরা ষ্টোরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

টিসিবি লাইসেন্স ছাড়া পলাশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আলীপুরে দুটি ওএমসএস লাইসেন্স, লাবসায় মের্সাস হাবিব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ওএসমএস লাইসেন্স, পাটকেলঘাটা বাজারে ২টি বিএডিসি সার বীজ লাইসেন্স। আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেট করে গড়ে তোলা এসব লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ করে শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশ। কাউকে মাসিক একটা নামমাত্র টাকা আবার কাউকে আওয়ামী লীগের ভয় দেখিয়ে হুমকি দিতেন।

তাছাড়া বরাদ্দ নিয়ম না মেনে পলাশ কুমিরা হাটবাজার, বিনেরপোতা মাছ বাজার ও পাটকেলঘাটা কাঁচাবাজার ইজারা নিয়ে নেয়। এসব হাটবাজার ইজারা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে সংসদ সদস্য মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নজরুল ইসলামের ছত্রছায়ায় সরুলিয়া ও আশাশুনিতে কয়েক একর কৃষি জমি ক্রয় করেন। একাধিক পেট্রোল পাম্পের শেয়ার ও রাবেয়া এন্টারপ্রাইজ নামে ট্রাকও রয়েছে।

গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছে শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশ। কিন্তু তিনি তার সব অবৈধ ব্যবসা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বহাল তবিয়তে পরিচালনা করছে। সম্প্রতি তালা উপজেলার ইউএনও অফিসের অফিস সহায়ক মনিরের যোগসাজশে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা, মন্দির এতিমখানার নামে জেলা প্রশাসকের তহবিল থেকে অনুদান নেওয়ার জন্য ৩০-৪০টি আবেদন করে বিগত কয়েক বছর ধরে তালার উপজেলার সব সরকারি বরাদ্দে ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে মনিরের যোগসাজশে অনুদান নেন এ শ্রমিক লীগ নেতা।

আব্দুর রব পলাশ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। সর্বশেষ তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছে। ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক হিসাবে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা চেয়ে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে পরাজিত হন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা না বলে এড়িয়ে যান এবং ব্যস্ত আছি বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল বলেন, আব্দুর রব পলাশের বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। আমি বিডিএস সার বীজ, টিসিবি, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইজসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি খতিয়ে দেখব। আমার অফিসের কেউ বরাদ্দ আত্মসাৎ জড়িত থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।a

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় রোধে সাতক্ষীরায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন

শ্রমিক লীগ নেতা পলাশের নিয়ন্ত্রণে ওএমএস, টিসিবি ১৫ লাইসেন্স

আপডেট টাইম : ০২:৩৪:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশের বিরুদ্ধে বিডিএস সার বীজ, টিসিবি, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইজসহ ১৫টি লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত পলাশ তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের প্রভাবশালী আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তৎকালীন এমপি ইঞ্জিনিয়ার মুজিবর রহমান ও মুস্তফা লুৎফৎল্লার ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী হয়ে উঠেন আব্দুর রব পলাশ। পরে নিজের পরিবার আত্মীয়-স্বজনের নামে টিসিবি, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইজ ও বিএডিসি সার বীজের ১৫টি লাইসেন্স করে নেয়। এক পর্যায়ে সিন্ডিকেট করে প্রায় ২০-৩০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক বনে যান তিনি।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে পলাশ নিজের নামে দুইটি টিসিবি লাইসেন্স করেছেন। একটি পাটকেলঘাটা বাজারে মুন ট্রের্ডাস অপরটি আশাশুনি কুল্লা গুনগরকাটিতে মের্সাস রাদ এন্টারপ্রাইজ। তাছাড়া তার আপন ছোট ভাই চাকরিচ্যুত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুর রউফ পল্টুর শালা জাহিদ হাসানের নামে মের্সাস জাহিদ স্টোর, খেশরা ইউনিয়নে বড়কাশিপুর মেঝো শ্যালিকা শালী শিরিনার নামে মের্সাস আলিফ ট্রের্ডাস, খালাতো ভাই হাবিবুর রহমানের নামে মের্সাস হাবিব ষ্টোর, মামা রবিউলের নামে মের্সাস মাওয়া ষ্টোর, খালু মোক্তার আলীর নামে মের্সাস আবিদ মুদিখানা ষ্টোর ও ছোট ভাই আব্দুর রউফের নামে মের্সাস মাছুরা ষ্টোরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

টিসিবি লাইসেন্স ছাড়া পলাশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আলীপুরে দুটি ওএমসএস লাইসেন্স, লাবসায় মের্সাস হাবিব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ওএসমএস লাইসেন্স, পাটকেলঘাটা বাজারে ২টি বিএডিসি সার বীজ লাইসেন্স। আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেট করে গড়ে তোলা এসব লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ করে শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশ। কাউকে মাসিক একটা নামমাত্র টাকা আবার কাউকে আওয়ামী লীগের ভয় দেখিয়ে হুমকি দিতেন।

তাছাড়া বরাদ্দ নিয়ম না মেনে পলাশ কুমিরা হাটবাজার, বিনেরপোতা মাছ বাজার ও পাটকেলঘাটা কাঁচাবাজার ইজারা নিয়ে নেয়। এসব হাটবাজার ইজারা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে সংসদ সদস্য মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নজরুল ইসলামের ছত্রছায়ায় সরুলিয়া ও আশাশুনিতে কয়েক একর কৃষি জমি ক্রয় করেন। একাধিক পেট্রোল পাম্পের শেয়ার ও রাবেয়া এন্টারপ্রাইজ নামে ট্রাকও রয়েছে।

গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছে শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশ। কিন্তু তিনি তার সব অবৈধ ব্যবসা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বহাল তবিয়তে পরিচালনা করছে। সম্প্রতি তালা উপজেলার ইউএনও অফিসের অফিস সহায়ক মনিরের যোগসাজশে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা, মন্দির এতিমখানার নামে জেলা প্রশাসকের তহবিল থেকে অনুদান নেওয়ার জন্য ৩০-৪০টি আবেদন করে বিগত কয়েক বছর ধরে তালার উপজেলার সব সরকারি বরাদ্দে ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে মনিরের যোগসাজশে অনুদান নেন এ শ্রমিক লীগ নেতা।

আব্দুর রব পলাশ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। সর্বশেষ তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছে। ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক হিসাবে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা চেয়ে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে পরাজিত হন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা না বলে এড়িয়ে যান এবং ব্যস্ত আছি বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল বলেন, আব্দুর রব পলাশের বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। আমি বিডিএস সার বীজ, টিসিবি, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইজসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি খতিয়ে দেখব। আমার অফিসের কেউ বরাদ্দ আত্মসাৎ জড়িত থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।a