আজ ১২:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
[gtranslate]
শিরোনাম ::
ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় রোধে সাতক্ষীরায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন শ্যামনগরে আড়ৎ থেকে ৭৫ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ব্যবসায়ীকে জরিমানা সাতক্ষীরায় এল্লারচর সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড ধ্বসে পড়ায় দুর্ভোগে তিন উপজেলার জনপদ আপিল বিভাগের রায়ের পর ইশরাকের শপথের বিষয়ে যা বললেন সিইসি নির্বাচন প্রস‌ঙ্গে প্রধান উপ‌দেষ্টার উ‌দ্দে‌শ্যে আপনি যদি ডেট দিতে না পারেন, আমরাই দিয়ে দেবো : দুদু গভীর নিম্নচাপ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন, ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে কাল সীমান্তে ৪টি স্বর্ণের বারসহ চোরাকারবারি আটক গুম হওয়া সাতক্ষীরা বিএনপি নেতা আবু সেলিমকে ফিরিয়ে দিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ বাংলাদেশে দেখা গেছে জিলহজের চাঁদ পবিত্র ঈদুল আজহা ৭ জুন সাতক্ষীরায় অবহিতকরণ সভায় বক্তার ‘স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও গৃহে তৈরী খাদ্য গ্রহণে অভ্যাস করতে হবে’

সাতক্ষীরার তালায় কপোতাক্ষ নদ দখলের উৎসবে “উন্নয়ন প্রচেষ্টা”

  • রিপোর্টার
  • আপডেট টাইম : ০৯:০৯:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫
  • ১০২ বার

আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা: “সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে, সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।” মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের এই বিখ্যাত কবিতার পঙক্তিগুলি কপোতাক্ষ নদের স্মৃতিতে আজও বেঁচে আছে। কিন্তু কবির স্মৃতিবিজড়িত এই নদটি আজ দখলদারিত্বের শিকার। সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় নদী তীরের প্রকৃতিকে ধ্বংস করে চলছে দখলের মহোৎসব। অভিযোগের তীর স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা “উন্নয়ন প্রচেষ্টা”-র দিকে, যারা কংক্রিটের পিলার, বাঁশ, ও জাল ব্যবহার করে কপোতাক্ষ নদের পাড় দখলে নিয়ে স্থায়ী কাঠামো তৈরি করছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, তালা সদর ইউনিয়নের মাঝিয়ারা এলাকায় কপোতাক্ষের পাড় ঘিরে কংক্রিটের পিলার ও বাঁশ বসানো হয়েছে এবং এর ওপর নির্মিত হয়েছে একটি বড় ছাউনি। স্থানীয়রা বলছেন, এই ধরনের কার্যকলাপ পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আবুল কাশেম বিশ্বাস বলেন, আগে এখানে একটি খাল ছিল, যা স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতো। কিন্তু এখন সেই খালের মূল প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে চ্যানেল কেটে খালের মুখ অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইয়াকুব সব বন্ধ করেছে, সে এই জগৎ জুড়ে সব নিয়েছে। মাঝিয়ারা গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, নদীর জায়গা দখল করে কেউ স্থাপনা তৈরি করতে পারে না। এটি জনগণের সম্পদ। কিন্তু ‘উন্নয়ন প্রচেষ্টা’ নামে সংস্থাটি এখানে কংক্রিটের পিলার বসিয়ে জায়গা দখল করছে। এভাবে নদীর জায়গা দখল হতে থাকলে অচিরেই এটি সংকুচিত হয়ে পড়বে, যা আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাসিন্দারা আরও জানান, যখনই কেউ উন্নয়ন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কথা বলতে যায়, তখন তাদেরই ম্যানেজ করে ফেলা হয়। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে প্রশাসন, সুধী সমাজ যারা এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করেন, সবাইকেই কোনো না কোনোভাবে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। উন্নয়ন প্রচেষ্টার পরিচালক নিজেই এসব বিষয় দেখভাল করেন। সম্প্রতি নদী দখলের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন এই প্রতিবেদকসহ কয়েকজন স্থানীয় সংবাদকর্মী। মাঠপর্যায়ে সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রথমে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সাংবাদিকরা রাজি না হলে, উন্নয়ন প্রচেষ্টার পরিচালক তাদের নিউজটি প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।

একই ধরনের অভিযোগ করেছেন আরও কয়েকজন সাংবাদিক। তাদের মতে, কপোতাক্ষ নদ দখলের মতো একটি গুরুতর ইস্যু নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এভাবে ভয়ভীতি দেখানো স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি স্বরূপ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উন্নয়ন প্রচেষ্টা’র পরিচালক শেখ ইয়াকুব আলী বলেন, নদী আমাকে তাড়াচ্ছে, আমি নদীকে দখল করিনি। যদি এটি সরকারি জমি হয়, তাহলে প্রশাসন এসে দেখিয়ে দিক এবং প্রয়োজন হলে ভেঙে ফেলুক। কিন্তু শুধুমাত্র রিপোর্ট প্রকাশ করলেই সত্য প্রমাণিত হয় না। তিনি আরও দাবি করেন, আমরা যেখানে আছি, সেখানে প্রতিনিয়ত ভাঙনের শিকার হচ্ছি। আমার প্রায় সাড়ে ১১ বিঘা জমি ছিল, যার একটি বড় অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর মধ্যে যে স্থাপনাটি আছে, সেটি আমাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়, বরং বাইরে থেকে আসা অতিথিদের জন্য করা হয়েছে। প্রশাসন যদি সঠিকভাবে পরিদর্শন করে, তাহলে তারা নির্ধারণ করতে পারবে নদীর জমি কোনটি এবং আমাদের অবস্থান কোথায়।”

এ ব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. রাসেল বলেন, উন্নয়ন প্রচেষ্টার কোনো জায়গা জবরদখল হয়েছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে এখানকার বাস্তবতা বুঝতে কয়েকজন ব্যক্তি মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দাবি, এটি তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি। তিনি আরও বলেন, যদি সত্যিই নদীর পাড়ের জমিটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়, তাহলে কাউকে উচ্ছেদ করার সুযোগ নেই। তবে যদি এটি নদীর অংশ বা এক নম্বর খাস খতিয়ানের জমি হয়, তাহলে অবশ্যই দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখা হবে।

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় রোধে সাতক্ষীরায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন

সাতক্ষীরার তালায় কপোতাক্ষ নদ দখলের উৎসবে “উন্নয়ন প্রচেষ্টা”

আপডেট টাইম : ০৯:০৯:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ মার্চ ২০২৫

আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা: “সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে, সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।” মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের এই বিখ্যাত কবিতার পঙক্তিগুলি কপোতাক্ষ নদের স্মৃতিতে আজও বেঁচে আছে। কিন্তু কবির স্মৃতিবিজড়িত এই নদটি আজ দখলদারিত্বের শিকার। সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় নদী তীরের প্রকৃতিকে ধ্বংস করে চলছে দখলের মহোৎসব। অভিযোগের তীর স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা “উন্নয়ন প্রচেষ্টা”-র দিকে, যারা কংক্রিটের পিলার, বাঁশ, ও জাল ব্যবহার করে কপোতাক্ষ নদের পাড় দখলে নিয়ে স্থায়ী কাঠামো তৈরি করছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, তালা সদর ইউনিয়নের মাঝিয়ারা এলাকায় কপোতাক্ষের পাড় ঘিরে কংক্রিটের পিলার ও বাঁশ বসানো হয়েছে এবং এর ওপর নির্মিত হয়েছে একটি বড় ছাউনি। স্থানীয়রা বলছেন, এই ধরনের কার্যকলাপ পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আবুল কাশেম বিশ্বাস বলেন, আগে এখানে একটি খাল ছিল, যা স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতো। কিন্তু এখন সেই খালের মূল প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে চ্যানেল কেটে খালের মুখ অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইয়াকুব সব বন্ধ করেছে, সে এই জগৎ জুড়ে সব নিয়েছে। মাঝিয়ারা গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, নদীর জায়গা দখল করে কেউ স্থাপনা তৈরি করতে পারে না। এটি জনগণের সম্পদ। কিন্তু ‘উন্নয়ন প্রচেষ্টা’ নামে সংস্থাটি এখানে কংক্রিটের পিলার বসিয়ে জায়গা দখল করছে। এভাবে নদীর জায়গা দখল হতে থাকলে অচিরেই এটি সংকুচিত হয়ে পড়বে, যা আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাসিন্দারা আরও জানান, যখনই কেউ উন্নয়ন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কথা বলতে যায়, তখন তাদেরই ম্যানেজ করে ফেলা হয়। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে প্রশাসন, সুধী সমাজ যারা এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করেন, সবাইকেই কোনো না কোনোভাবে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। উন্নয়ন প্রচেষ্টার পরিচালক নিজেই এসব বিষয় দেখভাল করেন। সম্প্রতি নদী দখলের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন এই প্রতিবেদকসহ কয়েকজন স্থানীয় সংবাদকর্মী। মাঠপর্যায়ে সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রথমে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সাংবাদিকরা রাজি না হলে, উন্নয়ন প্রচেষ্টার পরিচালক তাদের নিউজটি প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।

একই ধরনের অভিযোগ করেছেন আরও কয়েকজন সাংবাদিক। তাদের মতে, কপোতাক্ষ নদ দখলের মতো একটি গুরুতর ইস্যু নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এভাবে ভয়ভীতি দেখানো স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি স্বরূপ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উন্নয়ন প্রচেষ্টা’র পরিচালক শেখ ইয়াকুব আলী বলেন, নদী আমাকে তাড়াচ্ছে, আমি নদীকে দখল করিনি। যদি এটি সরকারি জমি হয়, তাহলে প্রশাসন এসে দেখিয়ে দিক এবং প্রয়োজন হলে ভেঙে ফেলুক। কিন্তু শুধুমাত্র রিপোর্ট প্রকাশ করলেই সত্য প্রমাণিত হয় না। তিনি আরও দাবি করেন, আমরা যেখানে আছি, সেখানে প্রতিনিয়ত ভাঙনের শিকার হচ্ছি। আমার প্রায় সাড়ে ১১ বিঘা জমি ছিল, যার একটি বড় অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর মধ্যে যে স্থাপনাটি আছে, সেটি আমাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়, বরং বাইরে থেকে আসা অতিথিদের জন্য করা হয়েছে। প্রশাসন যদি সঠিকভাবে পরিদর্শন করে, তাহলে তারা নির্ধারণ করতে পারবে নদীর জমি কোনটি এবং আমাদের অবস্থান কোথায়।”

এ ব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. রাসেল বলেন, উন্নয়ন প্রচেষ্টার কোনো জায়গা জবরদখল হয়েছে কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে এখানকার বাস্তবতা বুঝতে কয়েকজন ব্যক্তি মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দাবি, এটি তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি। তিনি আরও বলেন, যদি সত্যিই নদীর পাড়ের জমিটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়, তাহলে কাউকে উচ্ছেদ করার সুযোগ নেই। তবে যদি এটি নদীর অংশ বা এক নম্বর খাস খতিয়ানের জমি হয়, তাহলে অবশ্যই দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখা হবে।