আজ ১২:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
[gtranslate]

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ৪ আগস্ট

  • রিপোর্টার
  • আপডেট টাইম : ০৬:২০:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
  • ২০৮ বার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. শিহাবউদ্দীনের বিরুদ্ধে ৮৫ লাখ টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ, অফিসের নথিপত্র চুরি, দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ তদন্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা প্রশাসন ও কলেজ গভর্নিং বডি যৌথভাবে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রথম বৈঠক কাল সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টায় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে বসার কথা রয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির শর্তাবলী (সংশোধিত) রেগুলেশন, ২০১৯-এর ১৭(ঘ) ধারা অনুযায়ী গঠিত কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা প্রশাসন ও কলেজের প্রতিনিধি ছাড়াও শিক্ষক প্রতিনিধি রয়েছেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে অধ্যক্ষ শিহাবউদ্দীন ছুটির আবেদন না করেই অনুপস্থিত রয়েছেন। পরদিন ভোরে কলেজের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র চুরির ঘটনা ঘটে, যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন কলেজের দুই অফিস সহায়ক। রাতের পাহারাদাররা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান।

একাধিক অডিট প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অধ্যক্ষ কোনো নির্ধারিত ক্যাশবহি না রেখে ব্যক্তিগত ডায়েরিতে হিসাব রাখতেন। কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষা সফরের নামে ১৬ হাজার টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সম্মানী বাবদ ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ও বিএম কোর্স থেকে ১৮ হাজার ২৫০ টাকা উত্তোলন করে কোনো রসিদ বা ভাউচার জমা দেননি।

২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মো. আব্দুস সামাদ জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, অধ্যক্ষ শিহাবউদ্দীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং নিয়ম না মেনে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিলেন। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

তিন দফা কারণ দর্শানোর নোটিশেও কোনো জবাব না পাওয়ায় ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ পুনরায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত চেয়ে ২০২৫ সালের ২২ জুন ও ১০ জুলাই দু’বার তাগাদা পত্র পাঠায়।

এছাড়া, ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় সংঘটিত আলোচিত ত্রিপল হত্যা মামলায় মো. শিহাবউদ্দীন ১ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখিত। আশাশুনি থানায় দায়ের হওয়া সিআর মামলা (নং ৩৯২/২৪)-এ তিনি প্রধান আসামি। পাশাপাশি, চাকরি দেওয়ার নামে কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগও তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে।

হাইকোর্টে রিট দায়ের করে সাময়িক বরখাস্তাদেশ স্থগিত করালেও, সরকার পক্ষের আপিলে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করেন (আপিল মামলা নং-৮৭/২০২৫)। বর্তমানে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও তদন্ত কমিটি মো. শিহাবউদ্দীনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত, তাঁর এমপিও বাতিল এবং আত্মসাতকৃত অর্থ ফেরতের বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।

এই ঘটনা শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নয়, বরং দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় জবাবদিহিতা ও শাস্তির অভাবের প্রতিচ্ছবি—যেখানে ন্যূনতম প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হচ্ছে।

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ৪ আগস্ট

আপডেট টাইম : ০৬:২০:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. শিহাবউদ্দীনের বিরুদ্ধে ৮৫ লাখ টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ, অফিসের নথিপত্র চুরি, দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ তদন্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা প্রশাসন ও কলেজ গভর্নিং বডি যৌথভাবে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রথম বৈঠক কাল সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টায় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে বসার কথা রয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির শর্তাবলী (সংশোধিত) রেগুলেশন, ২০১৯-এর ১৭(ঘ) ধারা অনুযায়ী গঠিত কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা প্রশাসন ও কলেজের প্রতিনিধি ছাড়াও শিক্ষক প্রতিনিধি রয়েছেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে অধ্যক্ষ শিহাবউদ্দীন ছুটির আবেদন না করেই অনুপস্থিত রয়েছেন। পরদিন ভোরে কলেজের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র চুরির ঘটনা ঘটে, যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন কলেজের দুই অফিস সহায়ক। রাতের পাহারাদাররা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানান।

একাধিক অডিট প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অধ্যক্ষ কোনো নির্ধারিত ক্যাশবহি না রেখে ব্যক্তিগত ডায়েরিতে হিসাব রাখতেন। কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষা সফরের নামে ১৬ হাজার টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সম্মানী বাবদ ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ও বিএম কোর্স থেকে ১৮ হাজার ২৫০ টাকা উত্তোলন করে কোনো রসিদ বা ভাউচার জমা দেননি।

২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মো. আব্দুস সামাদ জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, অধ্যক্ষ শিহাবউদ্দীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং নিয়ম না মেনে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিলেন। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

তিন দফা কারণ দর্শানোর নোটিশেও কোনো জবাব না পাওয়ায় ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ পুনরায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত চেয়ে ২০২৫ সালের ২২ জুন ও ১০ জুলাই দু’বার তাগাদা পত্র পাঠায়।

এছাড়া, ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় সংঘটিত আলোচিত ত্রিপল হত্যা মামলায় মো. শিহাবউদ্দীন ১ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখিত। আশাশুনি থানায় দায়ের হওয়া সিআর মামলা (নং ৩৯২/২৪)-এ তিনি প্রধান আসামি। পাশাপাশি, চাকরি দেওয়ার নামে কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগও তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে।

হাইকোর্টে রিট দায়ের করে সাময়িক বরখাস্তাদেশ স্থগিত করালেও, সরকার পক্ষের আপিলে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করেন (আপিল মামলা নং-৮৭/২০২৫)। বর্তমানে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও তদন্ত কমিটি মো. শিহাবউদ্দীনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত, তাঁর এমপিও বাতিল এবং আত্মসাতকৃত অর্থ ফেরতের বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।

এই ঘটনা শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নয়, বরং দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় জবাবদিহিতা ও শাস্তির অভাবের প্রতিচ্ছবি—যেখানে ন্যূনতম প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হচ্ছে।