আজ ১২:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
[gtranslate]

টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা

  • রিপোর্টার
  • আপডেট টাইম : ০৮:০৫:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
  • ১২৬ বার

আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: টানা প্রায় দুই সপ্তাহ বিরতির পর ফের শুরু হওয়া বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। টানা বর্ষণে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিল, খাল, পুকুর, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট, আউশ ধান ও আমন বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষকরা। রোববার থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোল, মধুমোল্লারডাঙি, রসুলপুর, বকচরা, রাজারবাগান, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, গদাইবিল, মাঠপাড়া, পার-মাছখোলা, পুরাতন সাতক্ষীরাসহ পৌরসভার ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার আলিপুর, কাশেমপুর, লাবসা, বল্লী, ইউনিয়নসহ অধিকাংশ এলাকা বিনেরপোতা, গোপিনাথপুর, মাছখোলা, শাল্যেসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধ এলাকার অনেক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ঘরের ভিতর পানি ঢুকে পড়ায় অনেকেই বাঁশ ও কাঠ দিয়ে মাচান তৈরি করে সেখানেই আশ্রয় নিয়েছেন গ্রাম বাসি। রান্নাঘরে পানি উঠে যাওয়ায় পরিবারগুলোতে রান্নাবান্না একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় কলাগাছের ভেলায় চলাফেরা করতে দেখা গেছে স্থানীয়দের। ডুবে গেছে টিউবওয়েল, উঠানে হাটুসমান পানি। স্কুলগামী শিশুরা পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েছে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার ভোর থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত সাতক্ষীরায় মোট ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি জমে গেছে। তবে আগামী বুধবার থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টানা বৃষ্টির ফলে সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আউশ ধান ও আমন বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় মাছের ঘেরে পানি ঢুকে মাছ বের হয়ে গেছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক ও মৎস্যচাষিরা। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত জেলায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান, বীজতলা ও সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলোতে একই চিত্র দেখা গেলেও টেকসই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদাউস বলেন, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌর এলাকার ড্রেনগুলো খোলা হচ্ছে। খাল থেকে কচুরিপানা সরানোর কাজ চলমান। পাশাপাশি সার্কিট হাউস থেকে বাইপাস পর্যন্ত বড় একটি ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। এছাড়া, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান তাযকিয়া জানান, পৌরসভা এলাকায় বেতনা নদীর ওপর দেওয়া আড়াআড়ি বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে, যাতে পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারে।

ট্যাগ :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা

আপডেট টাইম : ০৮:০৫:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: টানা প্রায় দুই সপ্তাহ বিরতির পর ফের শুরু হওয়া বৃষ্টিতে সাতক্ষীরায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। টানা বর্ষণে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিল, খাল, পুকুর, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট, আউশ ধান ও আমন বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষকরা। রোববার থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোল, মধুমোল্লারডাঙি, রসুলপুর, বকচরা, রাজারবাগান, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, গদাইবিল, মাঠপাড়া, পার-মাছখোলা, পুরাতন সাতক্ষীরাসহ পৌরসভার ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার আলিপুর, কাশেমপুর, লাবসা, বল্লী, ইউনিয়নসহ অধিকাংশ এলাকা বিনেরপোতা, গোপিনাথপুর, মাছখোলা, শাল্যেসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধ এলাকার অনেক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ঘরের ভিতর পানি ঢুকে পড়ায় অনেকেই বাঁশ ও কাঠ দিয়ে মাচান তৈরি করে সেখানেই আশ্রয় নিয়েছেন গ্রাম বাসি। রান্নাঘরে পানি উঠে যাওয়ায় পরিবারগুলোতে রান্নাবান্না একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় কলাগাছের ভেলায় চলাফেরা করতে দেখা গেছে স্থানীয়দের। ডুবে গেছে টিউবওয়েল, উঠানে হাটুসমান পানি। স্কুলগামী শিশুরা পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েছে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার ভোর থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত সাতক্ষীরায় মোট ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি জমে গেছে। তবে আগামী বুধবার থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টানা বৃষ্টির ফলে সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আউশ ধান ও আমন বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় মাছের ঘেরে পানি ঢুকে মাছ বের হয়ে গেছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক ও মৎস্যচাষিরা। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত জেলায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান, বীজতলা ও সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলোতে একই চিত্র দেখা গেলেও টেকসই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদাউস বলেন, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌর এলাকার ড্রেনগুলো খোলা হচ্ছে। খাল থেকে কচুরিপানা সরানোর কাজ চলমান। পাশাপাশি সার্কিট হাউস থেকে বাইপাস পর্যন্ত বড় একটি ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। এছাড়া, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান তাযকিয়া জানান, পৌরসভা এলাকায় বেতনা নদীর ওপর দেওয়া আড়াআড়ি বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে, যাতে পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারে।