সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার ২৪ ঘন্টা পার হলেও প্রধান অভিযুক্তরা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। বরং অভিযুক্ত আল ইমরান ও অমিত ঘোষ বাপ্পাসহ অন্যান্যরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যেটি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিক সমাজে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
গতকাল ৩০ জুন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে বর্তমান সভাপতি আবুল কাশেমের সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের ওপর পরিকল্পিত ও বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক আহত হন। ঘটনার পর পরই প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান সাতক্ষীরা থানায় আবু সাঈদ, আব্দুল বারী, আল ইমরান, অমিত ঘোষ বাপ্পা এবং আরও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
কিন্তু মামলার পরও এখনো পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি। আহত সাংবাদিকদের অভিযোগ, অভিযুক্তরা এখনো শহরের বিভিন্ন স্থানে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নিজেদের স্বাভাবিকভাবে উপস্থিতি দেখিয়ে প্রশাসনকে অবজ্ঞা করছে, ছড়াচ্ছে নানান প্রোপাগান্ডা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে হামলার অন্যতম অভিযুক্ত আল ইমরান সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি একজন চিহ্নিত মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসী। তার অপকর্ম তুলে ধরে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় সংবাদ, সেই ক্ষোভের জের ধরে প্রেসক্লাব হামলার সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে উঠে এসেছে। ভিডিও ফুটেজেও তাকে হামলার সময় দেশিও অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে সাংবাদিক আমিনুর রহমান এবং ল এম. বেলাল হোসাইনের উপর ইমরানের হামলার ঘটনা।
অন্যদিকে, অমিত ঘোষ বাপ্পা সম্পর্কে অভিযোগ, তিনি একজন মাদকাসক্ত এবং তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক প্রতারণার অভিযোগ। সম্প্রতি সাতক্ষীরার পাকাপোল এলাকার একটি দোকান থেকে ট্রাফিক মামলার জরিমানা বাবদ নেওয়া ৩,০০০ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সাংবাদিকরা বলছেন, হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আল ইমরান ও অমিত ঘোষের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য এবং শারীরিকভাবে আহত সাংবাদিকদের বয়ান—সবকিছুই তদন্তের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তার না করাটা প্রশাসনের ‘চরম উদাসীনতা’ বলেই মনে করছেন তারা।
তারা আরও বলেন, আমরা যারা সত্য প্রকাশ করি, তাদের রক্ত ঝরছে প্রকাশ্য দিবালোকে। অথচ হামলাকারীরা বুক ফুলিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত আবু সাঈদকে ঘিরে রয়েছে রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও প্রভাবশালী যোগসূত্র। সাংবাদিকদের অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এবং ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ’র আর্থিক সহায়তাকারী বা ডোনার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৯ সালের ৩১ মে প্রেসক্লাবে প্রথম হামলার সময়ও এমপি রবির ছত্রছায়ায় থেকেই একই ধরনের হামলা চালিয়েছিলেন সাঈদের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী বাহিনী।
সাংবাদিকদের ভাষ্য মতে, সেসময় এমপি রবিকে খুশি করতেই প্রেসক্লাবের নবনির্মিত হলরুমটির নাম পরিবর্তন করে তিনি সেখানে ‘বঙ্গবন্ধু মিলনায়তন’ নামে একটি ফলক স্থাপন করেন। এরপর ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পালাবদলের পর আবু সাঈদ তার অবস্থান বদলে বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের ভিন্নমতের প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে অবস্থান করছেন। এই রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই হামলার মামলা দায়ের হওয়া সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা।
সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মামলার পরও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা অপরাধীদের পেছনে একটি প্রভাবশালী মহলের ছায়া থাকারই ইঙ্গিত দেয়। তারা বলছেন, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এই ধরণের হামলার মাত্রা আরও ভয়াবহ হতে পারে।
সাতক্ষীরার সাংবাদিক সমাজ একযোগে দাবি জানিয়েছেন, হামলায় জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক, এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। তাদের ভাষায়, আমরা কলম হাতে সত্য বলি, কিন্তু বারবার আমাদেরকে রক্ত দিয়ে তার মূল্য দিতে হচ্ছে। এবার যেন সেই চক্র ভাঙে।
রিপোর্টার 















